বিশ্বাসঘাতক মীর জাফরের বর্তমান বংশধরেরা কেমন আছে? মীর জাফরের ইতিহাস।






যুগে-যুগে, কালে-কালে মীর জাফরকে বাংলার মানুষ এক বিশ্বাসঘাতক বলেই জানবে। মীর জাফর বলতে আমরা বিশ্বাসঘাতকদেরই বুঝে থাকি। পলাশী যুদ্ধ হয়েছে আজ থেকে প্রায় ২৫০ বছর আগে। এর মাঝে গঙ্গা-ভাগীরথী দিয়ে অনেক পানি গড়িয়েছে, ইতিহাস বিকৃত করার চেষ্টাও হয়েছে অনেক। মীর জাফরের বংশধর বাংলার পরবর্তী নবাব ও ব্রিটিশরা মিলে ইতিহাস মুছে ফেলার চেষ্টাও কম করেনি। তা না পেরে ভিন্নভাবে ইতিহাস রচনা ও রটনার চেষ্টা করেছে। তবুও ইতিহাসের সরল ও সত্য পাঠতো এই যে, মীর জাফর এক বিশ্বাসঘাতক ছাড়া আর কিছুই নন।মীর জাফরের এই বিশ্বাসঘাতকতার গ্লানিকে এখনো বয়ে বেড়াতে হচ্ছে মীর জাফরের বর্তমান বংশধরদের। পলাশী যুদ্ধের ২৫০ বছর পরে এসেও বিশ্বাসঘাতকতার অভিশাপ থেকে মুক্তি মেলেনি মীর জাফরের বংশধরদের। পুর্বপুরুষের বিশ্বাসঘাতকতার গ্লানি বংশ পরম পরায় এখন বয়ে চলেছেন তারা। হেনোমন্যতায়, লজ্জায়, স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারেন না তারা, গোপন রাখেন আত্ম পরিচয়। 


ভারতের মুর্সিদাবাদের এখনো আছে বিশ্বাসঘাতক মীর জাফরের বাড়ী। বাংলার পরাধীনতার ইতিহাস যেমন লেখা হয়ে গেছে, তেমনি লেখা হয়ে গেছে মীর জাফরের ইতিহাস। মুর্শিদাবাদের পদে-পদে, পথে-পথে লেখা আছে বাংলার স্বাধীনতা ও পরাধীনতার ইতিহাস, দেশপ্রেম আর বিশ্বাসঘাতকতার ইতিহাস। এই শহরের যত্রতত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অবিস্মরণীয় ইতিহাসের ধংস নিসানা। যে শহর ছিলো বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার রাজধানী এখন তা জৌলশহীন সাদামাটা মহষ্যল। অথচ পলাশীর যুদ্ধে সিরাজবাহিনী পরাজিত না হলে হয়তো এই মুর্সিদাবাদই হত এই উপমহাদেশের সবচেয়ে উন্নত শহরগুলোর একটি। শুধু মুর্শিদাবাদ নয়, গোটা বাংলার আর্থসামাজিক অবস্থার হয়তো বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটতো। 

যার বিশ্বাস ঘাতকতার কারনে এই বাংলা ২০০ বছরের জন্য বন্দী হয়ে গিয়েছিলো ইংরেজদের হাতে, ইতিহাসের সে খলনায়ক চরম ঘৃনিত ব্যাক্তি মীর জাফরের বংশধরদের কথায় আজ আমরা সেগুলোয় জানতে চলেছি। 

পলাশীর প্রান্তরে পরাজয়ের সঙ্গে জড়িয়ে আছে একটি দরজা। এই দরজা বা গেট টি ‘নিমক হারাম দেউড়ি’ বা বেইমানের দরজা নামেই সবার কাছে পরিচিত। বিশ্বাসঘাতকদের সর্দার মীর জাফরের বাড়ির প্রধান ফটককেই জনসাধারণ ওই নাম দিয়েছে। সিরাজদৌলার খেয়েছেন পরেছেন, তার প্রধান সেনাপতি ছিলেন, তারপরেও তিনি তার সাথে নেমক হারামী, বিশ্বাস ঘাতকতা করেছেন সেই কারনেই তাকে নেমকহারাম নামে চিহ্নিত করা হয়েছে আর তার বাসার এই গেটটিকে বলা হয় নেমকহারাম গেট। 

ভেতরের অংশে পুরাতন প্রাসাদ প্রায় বিলীন হয়ে গেছে। এখানে এখন শুধু পরিত্যাক্ত পুরনো ভবন আর প্রাসাদের ধংসস্তুপই আছে শুধু। সিরাজ-উদ-দৌলার প্রধান সেনাপতি মীর জাফর সপরিবারে এখানেই বসবাস করতেন। কিন্তু এখানে তার কোন বংশধররায় এখানে এখন আর থাকেন না। তবে কিছুদিন আগেও কর্নারের এই ঘরটাতেই থাকতো তার এক বংশধরেরা। 

মূল প্রাসাদে না থাকলেও পাশেই হাজার দুয়ারী প্যালেসের পাশে এখনো বসবাস করছে তার কয়েক বংশধর। তাদের মধ্যে একজনের নাম জাফর আলী মির্জা। তিনি মীর জাফরের অষ্টম বংশধর। স্থানীয় নবাব বাহাদুর স্কুলের শিক্ষক ছিলেন তিনি। এখন অবসরে গেছেন। তার একাডেমিক নাম রেজা আলী মির্জা হলেও এলাকায় জাফর আলী মির্জা স্যার বলেই সবাই জানেন। তার আগের বংশধরেরা মূল প্রাসাদেই থাকতেন। কিন্তু লোকজন মূল ফটক হয়ে প্রাসাদের ভিতরে ঢুকেই গালাগালী করা শুরু করে দিতো। বেশীর ভাগ মানুষই খারাপ মন্তব্য করতো। বলতো এরা নেমকহারাম, এরা বেইমান, এদের পুর্বপুরুষ বেইমানী করে গেছে, দেশকে পরাধীন করে গেছে এরকম আরো অনেক কিছু। এই গালাগালী গুলো সহ্য করতে না পেরে মূল প্রাসাদে এখন আর কেউ থাকেন না। 

মীর জাফরের বংশধরেরা আর তেমন কেউ ই আর মুর্সিদাবাদে থাকেন না। তাদের বেশির ভাগ অংশয় এখন বাংলাদেশ ও পাকিস্থানের বাসিন্দা। পাকিস্থানের সাবেক প্রেসিডেন্ট ইস্কান্দার মির্জা মীর জাফরের ই বংশধর। 

সৈয়দ গোলাম মর্তুজা নামে মীর জাফরের এক বংশধর ১৯৪৭ সালে ততকালীন পুর্ব পাকিস্থানে চলে আসে এবং পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রোকৌশলী হিসাবে চাকরি নেন। তিনি মীর জাফরের নবম বংশধর। তিনি এখন ছেলে সন্তান সহ বসবাস করছেন ঢাকা শহরে। মীর জাফরের বংশধরদের সঙ্গে কথা বলে মনে হয় এখনও কি যেন এক ধরনের অজানা আতঙ্ক রয়েছে তাদের মাঝে। সম্ভবত সে আতঙ্ক থেকেই অন্তর্মুখী প্রচারবিমুখ হয়ে আছেন তারা। মিডিয়াকে এড়িয়ে চলেন, সমাজে নিজেদের পরিচয় লুকিয়ে রাখেন। ভারত সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মীর জাফরের বংশধররা স্ব-স্ব পরিচয় নিয়ে এখনো ঘৃনীত অবস্থায় আছেন। 

ইতিহাসের ঘৃণিত ব্যক্তি মীর জাফর ১৭৫৭ সালে ইংরেজদের সঙ্গে গোপন চুক্তি করে বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে হত্যা করে ক্ষমতায় আসেন। তার মৃত্যুর পর তিন স্ত্রী ও ১১০০ বংশধরকে মুর্শিদাবাদের জাফরাবাদে কবর দেওয়া হয়। তার কবরস্থানটি অত্যন্ত সুরক্ষিত। দর্শনার্থীদের ভারতীয় ১৫ রুপি টিকিট কেটে সেখানে প্রবেশ করতে হয়। সেখানে পারিবারিকভাবে সার্বক্ষণিক দেখভাল ও নিরাপত্তার দায়িত্বে আছে স্থানীয় কিছু লোকজন এবং পাশে থাকা কয়েকজন বংশধর। 

ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করে না। ইতিহাস বেইমানকে তার ‘মর্যাদা’ দিয়েছে। মীর জাফরের নামটি বেইমানের খাতায় লেখা হয়ে গেছে চিরদিনের জন্য। আর তার বেইমানীর ফল এখনো ভোগ করতে হচ্ছে তার বর্তমান বংশধরদের।

বেইমান মীর জাফরের কুকীর্তির সাক্ষ্য হিসেবে আজও দাঁড়িয়ে আছে ওই ‘নিমক হারাম দেউড়ি’। ভগ্নপ্রায় এ দরজাটি হয়তো নিশ্চিহ্ন হয় যাবে একদিন, মাটির সঙ্গে মিশে যাবে কোনো একদিন। কিন্তু তাতে কি মানুষ ভুলে যাবে ইতিহাসের এই বিশ্বাসঘাতক মীর জাফরকে?

বন্ধুরা, এ মীর জাফর ও তার বংশধরদের নিয়ে আপনি কিছু বলতে চাইলে বা জানাতে চাইলে কমেন্ট বক্সে অবশ্যই আপনার মন্তব্য করুন। ভিডিওটি ভালো লাগলে লাইক করুন, বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন আর সত্য, রোমাঞ্চকর ও ভিন্নধর্মী খবর পেতে সবার আগে পেতে অবশ্যই আমাদের চ্যনেটিকে সাবস্ক্রাইব করুন। আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।

Comments